মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২২ অপরাহ্ন

এক-দুই টাকার নোটের অভাবে বড় ক্ষতি

এক-দুই টাকার নোটের অভাবে বড় ক্ষতি

১০ টাকায় যে বিস্কুটের প্যাকেট পাওয়া যেত, সেটির দাম এখন ১৫। বেড়েছে ৫০ শতাংশ। কিন্তু উপকরণের মূল্য আর বাজারজাতকরণের খরচ কি ৫০ শতাংশ বেড়েছে? তাহলে ৫ টাকা বা ৫০ শতাংশ কেন বাড়ল দাম?

কোমলপানীয়র সবচেয়ে ছোট বোতলের দামও ২০ টাকার জায়গায় হয়েছে ২৫ টাকা। এখানেও বেড়েছে ৫ টাকা।

দুই ক্ষেত্রেই পাঁচ টাকা বাড়ার পেছনে একই কারণ থাকতে পারে, সেটি হলো এক ও ২ টাকার নোটের অভাবে এখন কার্যত নোটের সবচেয়ে ছোট একক হয়ে গেছে ৫ টাকা। বাংলাদেশে ব্যাংক নোটের সবচেয়ে ক্ষুদ্র একক এক টাকা ও দুই টাকার নোটের অভাবের কারণে দেশবাসী কী পরিমাণ ঠকল সেটির একটি উদাহরণ হতে পারে বাস ভাড়া। কিলোমিটার হিসেবে ভাড়ার এখন হিসাব নেই। ভাড়ার হিসাব কমপক্ষে ৫ টাকা দিয়ে হয়। অর্থাৎ ১০ টাকা থেকে বেড়ে ভাড়া ১২ টাকা হয় না, হয়েছে ১৫ টাকা। ১৭ টাকা না হয়ে হয়েছে ২০ টাকা।

কাঁচাবাজারের চিত্রটাও একই রকম। ১১ টাকা বা ১২ টাকা বা ১৭ টাকা বা ২১ টাকার হিসাব নেই। গুনতে হয় ১৫ না হয় ২০ না হয় ২৫ না হয় ৩০ টাকা-এভাবে।এককালে রিকশা ভাড়াও ৮ টাকা বা ৯ টাকা বা ১০ টাকা বা ১১ টাকা বা এভাবে নির্ধারণ হতো। সেখানেও এখন ১৫ বা ২০-এভাবে ঠিক হয়।

প্রতিদিন রিকশা বা বাসের ভাড়া, বিস্কুট, চানাচুর বা চিপসের মতো ছোটখাট কেনাকাটা, সবজি বা মাছ বা দুধ বা অন্য কোনো নিত্যপণ্য কেনার ক্ষেত্রে এভাবে কত এক বা দুই টাকা চলে যাচ্ছে, দিন শেষে বা মাস শেষে অঙ্কটা কত বড়, সেই হিসাব কষারও সুযোগ নেই। তবে ছোট ছোট অঙ্কগুলো জীবনে বড় চাপ ফেলছে এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।

দিন শেষে এই এক দুই টাকা করে অঙ্কটা যদি ২০ টাকা হয়, তাহলে মাসে বাড়তি বেরিয়ে যাচ্ছে ৬০০ টাকা। পরিবারের একাধিক সদস্যের যদি এই ক্ষতি হয়, তাহলে অঙ্কটা আরও বড় হয়।মধুবাগ থেকে লেগুনা করে মগবাজার ওয়্যারলেস স্টপেজে নামেন আমেনা খাতুন। ভাড়া ৮ টাকা। ১০ টাকা দিতেই ভাংতি নেই বলে জানান হেলপার। দাবি করেও লাভ হয়নি। টেম্পু ছেড়ে চলে যায়।

লেগুনার অন্য যাত্রীদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। ১০ টাকা দেয়ার পর ২ টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। দুই টাকার নোট এবং কয়েন সংকটে টেম্পু যাত্রী এবং হেলপারের মধ্যে কথা কাটাকাটি যেন নিত্য ব্যাপার হয়ে গেছে।শেওড়াপাড়া কাঁচাবাজার থেকে সবজি কেনার পর দোকানি পাবেন ১৮৪ টাকা। রেহানা বেগম ২০০ টাকার নোট দেয়ার পর দোকানি তাকে ফেরত দেন ১৪ টাকা। বাকি দুই টাকা খুচরা নেই বলে জানান তিনি।

শুরু হয় বাকবিতণ্ডা। রেহানা বলেন, প্রায় প্রতিদিন যাতায়াতে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। বাসায় অন্যদেরও ক্ষেত্রেও এমন সমস্যা হচ্ছে। হিসেব করে তিনি বলেন, ‘খুচরার অভাবে প্রতিদিন যদি ১০ টাকা এভাবে চলে যায় তাহলে মাসে প্রায় ৩০০ টাকা।’

একই চিত্র মুদিখানার দোকানেও। সব কেনাকাটার পর দোকানি রফিকুল ইসলামকে জানায়, ‘বিল ২২৪ টাকা। দোকানিকে ২২৫ টাকা দেয়া হলে এক টাকা ফেরত দেয়ার বদলে অনেক ক্ষেত্রে ধরিয়ে দেয়া হয় চকলেট। কেউ আবার বলে, ভাংতি নাই। তখন চলে আসতে হয়।’

ছোট নোটের অভাবের কারণ, ব্যাংকগুলো থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ সরবরাহ করা হচ্ছে না। অনেক ব্যাংকও ছোট নোটের চাহিদা না দেয়ায় সংকট বাড়ছে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |